Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস : নিরাপদ মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদন

গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) বা উত্তম মৎস্য চাষ অনুশীলন নামে ব্যাপকভাবে প্রচলিত মৎস্য চাষের এ পদ্ধতি মূলত আহরণ ও আহরণোত্তর পর্যায়ে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত নিয়মাবলি অনুসরণ করে নিরাপদ ও দূষণমুক্ত মাছ ও চিংড়ি উৎপাদন করা। তবে লক্ষণীয় যে, মাছ চাষের এ প্র্যাকটিস অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ সহনীয় ও সামাজিকদিক থেকে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক বিবেচনায় খামার ব্যবস্থাপনা, পোনার মান, খাদ্য ও পানির গুণাগুণ, মাছ ও চিংড়ি আহরণ ও আহরণোত্তর পরিচর্যা, পরিবহন ইত্যাদি সব কিছুই থাকবে জিএপির অন্তর্ভুক্ত।
জিএপি উদ্দেশ্য-
এক. ভোক্তার জন্য মানসম্পন্ন নিরাপদ মাছ ও চিংড়ি উৎপাদন করা।
দুই. মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন জীবাণু দ্বারা মাছ ও চিংড়ি যাতে সংক্রমিত হতে না পারে। সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তিন. চিংড়ি চাষের শুরু থেকে আহরণ ও আহরণোত্তর পরিচর্যা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে চিংড়িচাষি এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না, যাতে উৎপাদিত চিংড়ি মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে।
চার. ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক বা রাসায়নিক দ্রব্যাদি অথবা কীটনাশক দ্বারা চিংড়ি দূষিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
নিরাপদ চিংড়ি-
নিরাপদ চিংড়ি বলতে বুঝায় খামারে উৎপাদিত চিংড়ি বা সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত এবং যাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর  কোনো উপাদানের উপস্থিতি নেই, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিংড়ি চাষিকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তার চাষ পদ্ধতিতে কোনো ক্রটি ছিল না এবং এতে পণ্য দূষণের কোনো উপাদানের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়নি।
 যেসব কারণে ঘের বা খামারে নিরাপদ চিংড়ির উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে-
এক. ঘের বা খামারে রোগ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে, এমন কোনো উপাদান যেমন মানুষের মলমূত্র, গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ইত্যাদির ব্যবহার।
দুই. চিংড়ি চাষে নিষিদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কীটনাশক ও অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি ব্যবহার।
তিন. ঘের বা খামারে রোগাক্রান্ত পিএল মজুদ।
চার. রাসায়নিক দ্রব্যাদি বা অনুমোদিত ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার।
পাঁচ. ঘের বা খামারে ব্যবহৃত চিংড়ি খাদ্যে ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি।
ছয়. ঘের বা খামারে জীবাণুবাহী অবাঞ্ছিত প্রাণীর প্রবেশ, বিচরণ এবং পার্শ্ববর্তী স্থানে গবাদিপশু পালন।
সাত. চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা ইত্যাদি।
 ঘের বা খামারে অনিরাপদ চিংড়ি উৎপাদনের ক্ষতিকর দিকগুলো-
এক. প্রায়ই লক্ষ করা যায়, অনেক চাষি অননুমোদিত ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি চিংড়ি চাষে অবাধে ব্যবহার করে, এসব রাসায়নিক ও ওষুধের অবশেষ চিংড়ির দেহে লেগে থাকে, যা ভোক্তার স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
দুই. প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি পণ্যে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রধানত ঘের বা খামার থেকেই হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে খাদ্য হিসেবে চিংড়ি সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়।
তিন. চিংড়ির দেহে লেগে থাকা অননুমোদিত অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
 ঘের বা খামারে গুণগত মানসম্পন্ন নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদনে চাষিদের করণীয়-
এক. চিংড়ি চাষিকে ঘের বা খামারে সুস্থসবল ও রোগমুক্ত পিএল মজুদ করতে হবে যার কোনো বিকল্প নেই।
দুই. খাদ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুণগতমান নিশ্চিত হয়ে ঘের বা খামারে নিয়মিত যথাযথ পরিমাণে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
তিন. দূষণ ও সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য জলাশয়ে অবাঞ্ছিত প্রাণীর প্রবেশ শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে।
চার. পচা, বাসি, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নি¤œমানের খাদ্য ব্যবহার করা যাবে না।
পাঁচ. খাদ্য সংরক্ষণের স্থান জীবাণুমুক্ত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং অবাধে আলো বাতাস চলাচল করতে পারে, এমন পরিবেশবান্ধব হতে হবে।
ছয়. ছুঁচো, ইঁদুর, বেজি, ভোঁদড় ইত্যাদি প্রাণী যাতে খাদ্যগুদামে ঢুকতে না পারে, তার সুব্যবস্থা গ্রহণ হবে একান্তই জরুরি।
সাত. চিংড়ি চাষ ও চিংড়ি খাদ্যে অননুমোদিত এবং লেবেলবিহীন অ্যান্টিবায়োটিক কোনো অবস্থায়ই ব্যবহার করা যাবে না।
আট. দূষণ এড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে চিংড়ি সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে।
নয়. ঘের বা খামারে  ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নিয়মিত পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত রাখা অতীব অপরিহার্য একটি বিষয়।
 ঘের বা খামারে চাষিদের অনুসরণযোগ্য প্রধান প্রধান গুড প্র্যাকটিস
 ঘের বা খামারের অবস্থান সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস-
এক. গৃহপালিত পশুর খামার ও পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরের আবর্জনা ইত্যাদি হতে ঘের বা খামার কিছুটা দূরত্বে স্থাপন করতে হবে। যাতে জলাশয়ের পানি দূষিত হতে না পারে।
দুই. ঘের বা খামার নির্মাণের সম্ভাব্য স্থানে এর আগে কোনো প্রকার কীটনাশক ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে কিনা কিংবা বর্তমানে কোনো জীবাণুর অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, তা ও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
চিংড়ি খামারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস
এক. খামার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
দুই. এক খামারের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করে অন্য খামারে ব্যবহার করা যাবে না। একবার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পুনরায় ব্যবহারের আগে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
তিন. গৃহপালিত পশুপাখির গোবর, বিষ্ঠা সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
চার. খামারে কর্মচারী ও জনসাধারণের অবাধ তথা যথেচ্ছ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
চিংড়ির খাদ্য সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস-
এক. এই ক্ষেত্রে একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস হতে প্রাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য ব্যবহার করতে হবে।
দুই. খাদ্যে ব্যবহৃত উপকরণের গুণগতমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
তিন. পুরনো, মেয়াদোত্তীর্ণ নি¤œমানের খাবার ব্যবহার করা যাবে না।
চার. খাদ্যগুদামে জীবাণুবাহী তেলাপোকা, ইঁদুর, বেজি, পাখি ইত্যাদির প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
পাঁচ. কাঁচা খাবার সাসরি ব্যবহার করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়।
ছয়. চিংড়ির দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্যে হরমোনজাতীয় কোনো উপাদান ব্যবহার করা সমীচীন নয়।
চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত পানি সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস-
এক. পার্শ্ববর্তী নদী, খাল-বিল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎস থেকে ঘেরে বা খামারে পানি দূষণের সম্ভাবনা আছে কি না যাচাই করে দেখতে হবে।
দুই. ঘের বা খামারের পানিতে ক্ষতিকর জীবাণু, কীটনাশক ইত্যাদি আছে কি না নিশ্চিত হতে হবে।
তিন. নর্দমা ও কল-কারখানার দূষিত পানি যাতে ঘেরে বা খামারে প্রবেশ করতে না পারে, তার সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চিংড়ি আহরণ সংক্রান্ত গুড প্র্যাকটিস-
এক. চিংড়ি আহরণের ২-৩ দিন পূর্ব থেকেই খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
দুই. ভোরে কিংবা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় চিংড়ি আহরণ করা উত্তম।
তিন. চিংড়ি সংরক্ষণে সুপেয় পানি দিয়ে তৈরি বরফ ব্যবহার করাই শ্রেয়।
চার. আহরিত চিংড়ি বরফ ঠাণ্ডা পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিবে, অতঃপর প্রতি কেজি চিংড়ি এক কেজি বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করে যথাশিগগির পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাঁচ. বরফ পরিবহনে ব্যবহৃত যাবতীয় যন্ত্রপাতি সর্বদা জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।
ওষুধ ব্যবহারে গুড প্র্যাকটিস-
এক. কেবল অনুমোদিত ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে ।
দুই. ওষুধ সংরক্ষণে যথাযথ সতর্কতামূলত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা অতীব জরুরি।
তিন. সঠিক বিধি-নিষেধ মেনে ওষুধ ব্যবহার করাই সর্বোত্তম।
চার. ওষুধ ব্যবহারের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ করা একান্তই অপরিহার্য।
চিংড়ি চাষের সামাজিক ও পরিবেশগত গুড প্র্যাকটিস-
এক. ঘেরের জমির বৈধ মালিকানা থাকা অত্যাবশ্যক।
দুই. উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংস করে ঘের তৈরি করা যাবে না।
তিন. পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠীর জীবনজীবিকার ক্ষতি হয়, এমন স্থানে ঘের তৈরি করে চিংড়ি চাষ করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
চার. ঘেরের কারণে যাতে মাটি ও আশপাশের জলাশয়ের লবণাক্ততা বৃদ্ধি না পায় সে দিকে লক্ষ্য রেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বস্তুত, নিরাপদ মাছ ও চিংড়ি উৎপাদনের বিষয়টি এখন আর শুধু আহরণোত্তর পরিচর্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর আগে আমাদের দেশে মাননিয়ন্ত্রণের জন্য মাছ ও চিংড়ি চাষ পর্যায় অপেক্ষা আহরণোত্তর পরিচর্যাকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হতো। সময়ের পথ পরিক্রমায় বিশ্বব্যাপী নিরাপদ খাদ্যের মানদণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এরই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশেও নিরাপদ খাদ্যের মানদ- হিসেবে ঘের ও খামারে উৎপাদন পর্যায়ে  সর্ব প্রকার দূষণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে ও ফলপ্রসূ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আর এজন্য নিরাপদ মাছ ও চিংড়ি উৎপাদন সুনিশ্চিত করতে গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস (উত্তম মৎস্য চাষ অনুশীলন) একান্তই অপরিহার্য, যার কোনো বিকল্প নেই।

দলিল উদ্দিন আহমদ*
*মনি ফার্মেসি ফতুল্লা রেলস্টেশন রোড, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ, মোবা : ০১৭২৪০৫০৪০৩

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon